কেশুতি পাতার গুনাগুন-কেশুতি পাতায় মিলবে জাদুকরি সমাধান

প্রিয় পাঠক আপনি কি কেশুতি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন?তবে এই পোস্টটি পড়ুন।এই পোস্টটিতে আমি কেশুতি পাতার গুনাগুন, কেশুতি পাতার তেল তৈরি নিয়ম সহ কেশুতি পাতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছি।
এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কেশুটি পাতা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

ভূমিকা

কেশুতি উদ্ভিদটি একটি ঔষুধি গাছ।এটি এক এক মানুষের কাছে এক এক নামে পরিচিত।কেউ এটিকে ভৃঙ্গরাজ বলে তো কেউ বলে কালোকেশী। কেউ বলে ভীমরাজ তো কেউ বলে কেশুতি, কেশুত, কেউতি, কলসাতা। এর বৈজ্ঞানিক নাম:Ectipta prostrate. এবং এটির ইংরেজি নাম False Daise. স্থান ও অঞ্চল ভেদে মানুষের কাছে ভিন্ন নামে এই উদ্ভিদটি পরিচিত।

কোন প্রকার যত্ন ছাড়াই এই উদ্ভিদটি সহজেই বেড়ে উঠতে পারে বলে জমিতে পুকুরের পাশে মাঠে,ঘটে, জঙ্গলে সব জায়গাতেই এই উদ্ভিদটির খুব সহজে দেখা মেলে। সাধারণত কেশুতি গাছের ফুল সাদা এবং হলুদ রঙের হতে দেখা যায়। এর ফল গাড়ো সবুজ রঙের হয়।

এটি সাধারণত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।এর ফলের মধ্যে কালোজিরার মত ছোট কালো বীজ থাকে। এই গাছটি শুধু বাংলাদেশেই নয় ব্রাজিল,ভারত,চীন এবং থাইল্যান্ডে ও দেখতে পাওয়া যায়। এ উদ্ভিদের প্রতিটি অংশতেই ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।

কেশরাজ গাছ চেনার উপায়

কেশরাজ একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর শাখা গুলো সাধারণত লতানো হয়ে থাকে। এর শাখা গুলো ভারী হওয়ায় নিচের দিকে হেলানো থাকে। শাখা থেকে প্রশাখা বের হতে দেখা যায়।


এ উদ্ভিদের পাতা সাধারণত ছোট হয় ও লম্বায় ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার হয় এবং রং হয় গাড়ো সবুজ। শাখার ন্যায় পাতা ও বিপরীত ভাবে বের হয়। এই গাছের ফুল সাধারণত সাদা অথবা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। প্রশাখার প্রান্ত থেকে ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই ফুল থেকে সবুজ রঙের ফল হয়।

কেশুতি পাতার ব্যবহার

প্রাচীনকাল থেকেই কেশুতি পাতা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে।বর্তমানেও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে এই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হচ্ছে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কেশুতি পাতার ব্যবহার সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়।কাশির প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কেশুতি পাতা বেটে খেলে উপকার মিলবে।


কেশুতি পাতা বেটে লাগলে শরীরের ক্ষত স্থান দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হবে এবং ক্ষত দ্রুত সুখায় যাবে।কৃমি দুর করতে এই উদ্ভিদটি কার্যকর ভূমিকা রাখে সেক্ষেত্রে গরম পানির সাথে কেশুতি পাতার গুড়া মিশিয়ে খেলে বা বেটে খেতে হবে। যারা গর্ভবতী আছেন তাদের ক্ষেত্রে কেশুতি পাতা ব্যাবহার না করায় ভালো তবে যদি একান্তই এই পাতা ব্যাবহার করতে চান তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।

গ্রাম অঞ্চলে এখনও বিভিন্ন চিকিৎসায় এই কেশুত পাতার ব্যাবহার দেখা যায়।মাথা ঠাণ্ডা রাখতে কেশুতি পাতার তেল ও রসের ব্যাবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও মাথার চুল কালো,ঘন,লম্বা করতে কেশুতি পাতার জুরি মেলা ভার। লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় কেশুতি পাতা ব্যাবহার করা হয়।

এছাড়াও মশা তারাতে কেসরাজ পাতা ব্যাবহার করা যায় সেক্ষেত্রে পাঁচশ মিলি পানির সাথে দুই থেকে তিন চামুচ কেশুতি পাতার রস মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার

চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যাবহার কম বেশি আমাদের সকলেরই জানা।মূলত চুলের যত্নে এই উদ্ভিদটি সব থেকে বেশি ব্যাবহৃত হয় সে কারণেই এই উদ্ভিদের নাম কালকেশী বা কেশরাজ। চুলের গোড়া শক্ত করতে,চুল পড়া বন্ধ করতে,মাথা ঠাণ্ডা রাখতে এই কালকেশী অতুলনীয় ভূমিকা রাখে।

অনেকেই আছেন যাদের তেমন বয়স না হওয়া সত্বেও চুল পেকে যায় অর্থাৎ অকালে চুল পেকে যায় এই পাকা চুলকে কালো করতে কেশুতি পাতা নিয়ে পানির সাথে ফুটিয়ে নিতে হবে তারপর সে পানি ঠান্ডা করে মাথায় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

অনেক সময় বেশিক্ষণ রোদ্রের মধ্যে থাকার ফলে মাথা ব্যাথার সমস্যা দেখা যায় এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে কেশুতি পাতার রস দুই তিন ফোটা নিয়ে কপালে মালিশ করতে পারেন।এছাড়াও যাদের উকুনের সমস্যা আছে তারা মাথার ত্বকে কেশুতি পাতার রস লাগিয়ে মাথা পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে একঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে পারেন এটি সপ্তাহে দুই দিন ব্যাবহার করতে পারেন উকুন চলে যাবে।

আবার যাদের মাথায় খুশকির সমস্যা আছে তারাও এই রস ব্যাবহার করতে পারেন খুশকি সমস্যার সমাধান মিলবে।আবার এই কালকেশী প্যাক হিসেবেও ব্যাবহার করা যেতে পারে প্যাক তৈরি করতে চার টেবিল চামুচ মেথি সারা রাত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে সকালে সে মেথি বেটে তার সাথে নারিকেল তেল,টকদই,একটি ডিম ও কেশুতি পাতার রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন এটি মাসে অন্তত তিন বার ব্যাবহার করতে হবে।

সতর্কতা:যদি আপনাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকে তবে কেশুতি তেল, রস অথবা প্যাক চুলে না ব্যাবহার করাই ভালো।

কেশুতি পাতার গুনাগুন

কেশুতি পাতার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবেনা। এটি শুধু চুল এবং ত্বকের যত্নেই নয় বরং বিভিন্ন রোগ সারাতেও ভূমিকা পালন করে থাকে। কেশুতি পাতা ডায়াবেটিকস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।এক গবেষণায় দেখা গেছে কান্সেরের কোষ ধ্বংস করতে কেশুতি পাতা সহায়তা করে।স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান মিলেছে এই কেশুতি পাতাতে।

লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন লিভার সিরোসিস, লিভারের জন্ডিস সারাতেও কেশুতি পাতা ভূমিকা লক্ষণীয়।অনেক রোগের ওষুধ তৈরিতে এই পাতার রস ব্যাবহার করা হয়। কাশির সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান মিলবে এই কেশুতি পাতায়।কৃমি দুর করতেও এই উদ্ভির কার্যকর।

এই কেশুতি পাতাতে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট রয়েছে। ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা দিলে ব্রণ দুর করতে কেশুতি পাতার রস রাতে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখলে ব্রণ কমে যাবে। শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে সেখানের রক্তপরা দ্রুত বন্ধ করতে এবং ক্ষত দ্রুত সরানোর ক্ষমতা রাখে এই উদ্ভিদ।

কেশুতি পাতা শাক হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়।এছাড়া কেশুতি পাতার গুড়া হাফ গ্লাস পানির সাথে এক চামুচ মিক্স করে খেলে এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে। কেশুতি পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

কেশুতি পাতার তেল তৈরি

চুলের যত্নে কেশুতি পাতার ব্যাবহার আমরা আগেই দেখেছি এখন দেখবো কিভাবে এই পাতা দিয়ে তেল তৈরি করতে হয়।কেশুতি পাতার তেল তৈরি করতে নারিকেল তেল অথবা সেসামি অয়েল নিতে হবে ২৫০ মিলি তারপর সে তেলের সাথে জবা ফুল,কারিপাতা,মেথি, আমলকী এবং কেশুতি পাতা মিশিয়ে চুলাতে দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে এরপর ঠাণ্ডা হলে ছেকে বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে এই তেল বেশি ফুটানো যাবেনা এতে করে নারিকেল তেলে থাকা পুষ্টির উপাদান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।সবথেকে ভালো হয় যদি এই তেল তৈরিতে এক্সট্রা ভার্জিন তেল ব্যাবহার করলে।এই তেলটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করা উত্তম।

আবার একটা বড় গামলাতে গরম পানি নিয়ে তাতে একটি মাঝারি সাইজের বাটি নিয়ে তাতে নারিকেল তেল দিয়ে তার মধ্যে কেশুতি পাতার রস মিশয়ে নিতে হবে।তারপর কিছুক্ষণ নেড়ে গরম হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে এবং ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথায় ব্যাবহার করতে হবে।

শেষ কথা

কেশুতি পাতা গুনাগুনে পরিপূর্ণ। কেশুতি আমাদের কাছে প্রকৃতির একপ্রকার আশীর্বাদ বলা যায়।এই উদ্ভিদ প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন অসুখের নিরাময়ক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।প্রিয় পাঠক আসা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।আমার এই আর্টিকলটি ভালো লাগলে আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url