ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন যেভাবে নিবেন
সুন্দর ও প্রাণবন্ত ত্বক সকলেই চাই।ত্বককে সুন্দর রাখতে অনেকে অনেক ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকেন।কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট বর্জন করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন খুব সহজেই নিতে পারেন।
এই পষ্টটিতে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন,ব্রণযুক্ত ত্বকের যত্ন সহ বিভিন্ন ফেসপ্যাক নিয়ে আলোচনা করেছি।
ভূমিকা
বাজারে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল যুক্ত প্রসাধনী পাওয়া যায় যা ব্যাবহারে ত্বক প্রথম দিকে সুন্দর দেখালেও দীর্ঘদিন ব্যাবহারের ফলে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। যা সুন্দর্য বর্ধনের নামে বিপদ ডেকে আনছে।ঘরে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যাবহার করে প্রাকৃতিক ভাবে আমরা ত্বকের যত্ন নিতে পারি।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া সুরক্ষিত একটি পদ্ধতি।বিভিন্ন ঘরোয়া প্যাক ব্যাবহার করে ত্বককে দাগহীন ও উজ্জ্বল করে তুলতে পারি।ঘরোয়া প্যাক ত্বকে ব্যাবহারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ।
প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন
ত্বককে ভালো রাখতে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরি।প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক একটি সুস্থ ও সুন্দর ত্বক পাওয়া সম্ভব।প্রতিদিন ত্বকের যত্নে ফেসওয়াশ, টোনার, মস্তুরিজার রাখা জরুরি।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বেসনের সাথে ময়দা মিক্স করে মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন ময়দা ত্বকের গভীর থেকে ময়লা,ধুলোবালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ফলে এটি অনেক ভালো একটি ফেসওয়াশ।
তারপর টোনার।ফেসওয়াশ করার পর টোনার ব্যাবহার করা জরুরি টোনার এর জন্য শসার রস বা গোলাপ জল ব্যাবহার করা যেতে পারে।তারপর আসে মসচুরাইজার।মসচুরাইজার হিসাবে বাদামের তেল ব্যাবহার করা যেতে পারে।তবে যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা আলিভেরা জেল ব্যাবহার করতে পারে।
প্রতিদিন সকালে এবং রাতে এই তিনটি জিনিস অবশ্যই মেনে চলতে হবে।রোদের বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।সপ্তাহে দুই দিন ফেস স্ক্র্যাব করতে হবে।এছাড়া প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।সুষম খাদ্য খেতে হবে।রোদে ছাতা ও সান গ্লাস ব্যাবহার করতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিলে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক পাওয়া সম্ভব।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে অনেকে বার বার মুখ ধুয়ে থাকেন।ভাবেন বার বার মুখ ধুলে তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে এমনটি একদমই নয় বরং তৈলাক্ত ভাব আরো বেরে যায় এতে। দিনে দুই থেকে তিন বার(সকালে,বাহিরে থেকে ঘরে ফিরে,রাতে) মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নেয়া ভালো।
তৈলাক্ত ত্বককে ভালো মত এক্সফলিয়েট করা উচিত।এর জন্য ওটস খুব ভালো কাজ করে। ওটস গুঁড়ো করে পরিমাণ মত পানি আর সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে মুখ মেসেজ করুন।এটি অনেক ভালো এক্সফলিয়েট এর কাজ করবে।লেবু ত্বকের তৈলাক্ততা কমাতে সাহায্য করে তাই তৈলাক্ত ত্বকের যে কোনো প্যাক এর সাথে লেবু মিক্স করে ব্যাবহার করতে পারেন।
মুলতানি মাটি ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার করে এবং ত্বকের বাড়তি তৈলাক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে।মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল মিক্স করে প্যাক বানিয়ে ব্যাবহার করতে পারেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন
- বেসনের ফেসপ্যাক:বেসনের ফেসপ্যাক বানাতে দুই টেবিল চামুচ বেসনের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মুখে মেখে সুখিয়ে গেলে হালকা হাতে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে মুখে স্ক্র্যাব এর ও কাজ করবে।রুক্ষ ত্বকের জন্য গোলাপজলের পরিবর্তে কাঁচা দুধ ব্যাবহার করতে হবে।
- কাঁচা দুধের ফেসপ্যাক:কাঁচা দুধ খুব একই সাথে ময়েশ্চারাইজার ও ক্লিনজার হিসাবে কাজ করে।তুলার বলের সাহায্যে কাঁচা দুধ নিয়ে পুরো মুখে লাগান এটি একই সাথে ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করবে।এছাড়া কাঁচা দুধ এর সাথে সামান্য পরিমাণ চালের গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে স্ক্র্যাব হিসাবে ব্যাবহার করা যায়।মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক:মুলতানি মাটি আমাদের ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও ধুলোবালি দুর করে থাকে।প্রয়োজন মত মুলতানি মাটি গোলাপ জলের সাথে মিক্স করে মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে সুখিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।আবার মুলতানি মাটির সাথে সামান্য চন্দন গুঁড়ো ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে দিয়ে শুখিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন ব্রণ দুর করতে সাহায্য করবে।
- চন্দনের প্যাক:অ্যালোভেরা জেল ও চন্দনের প্যাক:অ্যালোভেরা জেল সাথে চন্দন পাউডার মিক্স করে ত্বকে লাগান শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন ত্বকের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
- চন্দন ও নিম পাতা গুরার প্যাক:১টেবিল চামুচ চন্দন গুঁড়ো ও হাফ টেবিল চামুচ নিম পাউডার গোলাপজল এর সাথে মিক্স করে মুখে লাগিয়ে রাখুন শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন ব্রণ দুর হবে।
- দুধ ও চন্দনের প্যাক:২ টেবিল চামুচ চন্দন গুঁড়ো এক চিমটি হলুদ নিয়ে দুধের সাথে মিক্স করে মুখে লাগান ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যাবহার
- নিম পাতার সাথে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ দিয়ে পানি বা গোলাপজল এর সাথে মিক্স করে ত্বকে দিন ত্বকের ফুসকুড়ি ও লাল ভাব দুর হবে।
- নিম পাতা পানির সাথে ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করে নিন এটি একটি ভালো টোনার হিসেবে কাজ করবে।
- টমেটোর ফেসপ্যাকটক দই বা দুধ এর সাথে টমেটোর রস মিক্স করে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দুর হয়ে যাবে।
- বেসন টক দই টমেটোর রস মিক্স করে ত্বকে লাগান ত্বক উজ্জ্বল হবে।
- ত্বকের যত্নে শসার ব্যাবহার:শসার রস বের করে তা দ্বারা বরফ জমিয়ে নিন রোদ থেকে আসে ফেসে লাগান এটি ত্বক ঠান্ডা রাখবে।
- শসার রসের সাথে গোলাপজল মিক্স করে টোনার হিসাবে ব্যাবহার করতে পারেন।
- নারিকেল তেলের ব্যাবহার:নারিকেল তেল শুষ্ক ত্বকের জন্য অনেক উপকারী,নারিকেল তেল ত্বককে মসচুরাইজ করে থাকে।
- মেকআপ রিমুভাল হিসাবে নারিকেল তেল ব্যাবহার করলে এটি ত্বকের ভিতর থেকে মেকআপ রিমুভ করতে সাহায্য করবে।
ব্রণযুক্ত ত্বকের যত্ন
ব্রণযুক্ত ত্বকের যত্নে চন্দনের সাথে গোলাপজল মিক্স করে প্যাক বানিয়ে ব্যাবহার করা যেতে পারে।মুলতানি মাটি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যাবহার করা যেতে পারে। মুলতানি মাটি ত্বকের ওয়লি ভাব দূর করে ব্রণ দুর করতে সাহায্য করে।ব্রণে হয় দেয়া যাবেনা এতে দাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
তৈলাক্ত খাবার কম খেতে হবে।পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।প্রয়োজনে ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে অনেক সময় হরমোনের বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্রণ হয়ে থাকে।ব্রণের সমস্যায় আমরা অনেকেই টুথ পেস্ট ব্যাবহার করে থাকি যা একদমই ঠিক নয় এতে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়।
রাতে ত্বকের যত্ন
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।ত্বকে কোনো ধরনের মেকআপ থাকলে টা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে।রাতে ত্বকের রিপেয়ার হওয়ার সময় তে এই সময় ঠিক মত যত্ন নেয়া জরুরি।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো মত মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিয়ে তাতে টোনার ব্যাবহার করে নিতে হবে তারপর মশ্চারাইজার হিসাবে গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল বা অ্যালোভেরা জেল ও লাগানো যেতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসিয়াল
অনেকে আছেন যারা ঘরের ঝামেলা এড়াতে পার্লার ছুটে যান ফেসিয়াল করতে।কিন্তু আপনি জানেন কি সামান্য কিছু স্টেপ ফলো করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসিয়াল করা সম্ভব।ঘরোয়া ভাবে ফেসিয়াল করলে পার্লারের থেকে কম খরচে ফেসিয়াল করা সম্ভব হবে। তো চলুন জেনে নিই কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসিয়াল করতে হয়।
ধাপ ১: ফেসিয়ালের সর্ব প্রথম ধাপ হচ্ছে মুখ পরিষ্কার করে নেয়া।আপনার মুখে যদি কোনো প্রকার মেকআপ থাকে তবে সেটি ভালো ভাবে ক্লিন করে নিতে হবে। তারপর যে কোনো একটা ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ওয়াশ করে নিতে হবে।অনেকেই আছেন যারা ফেইসওয়াশ এর সময় মুখ অনেক জোরে মেসেজ করেন যা একদমই ঠিক নয় এতে ত্বক ড্যামেজ হয়ে যায় তাই হালকা হতে আলতো ভাবে ত্বক মেসেজ করে ধুয়ে ফেলবেন।
ধাপ ২: মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করার পরে স্ক্র্যাব করতে হবে।স্ক্র্যাব ফেসিয়ালের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।স্ক্র্যাব করার জন্য বেসন অনেক ভালো কাজ করে।বেসনের সাথে পানি মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে আলতো করে মেসেজ করুন ৩-৪ মিনিট মেসেজ করুন।মেসেজের ফলে স্কিনের ব্ল্যাক হেডস এবং হোয়াইট হেডস গুলো উঠে যাবে।
ধাপ ৩: তারপরে স্কিনে ব্লাড সার্কুলেশন সচল করার জন্য ক্রিম মেসেজ করতে হবে এর জন্য অ্যালোভেরা জেলের সাথে সামান্য গ্লিসারিন ও কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল অথবা আলমন্ড অয়েল মিক্স করে ফেসে রাউন্ড করে মেসেজ করতে হবে।এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করবে।
ধাপ ৪: স্ক্র্যাব করার পর ফেসপ্যাক লাগাতে হবে।আপনি বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া উপাদান দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন। আবার কাচা দুধের সাথে মধু বেসন মিক্স করে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন।ফেসপ্যাক মুখে ৫-৭ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। যখন মুখে ফেসপ্যাক লাগাবেন তখন এর সাথে চোখে সশা লাগিয়ে রাখতে পারেন ক্লান্তি দুর করতে সোষা খুব ভালো কাজ করে।
ধাপ ৫: ফেসপ্যাক ভালো মত ফেস থেকে ক্লিন করে তারপরে ফেসে জেল ব্যবহার করতে হবে।এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল ও ব্যাবহার করতে পারেন।সুখাই আসলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ধাপ ৬: তারপর স্কিনে টোনার এপ্লাই করতে হবে।টোনার স্কিনের ph ধরে রাখে।টোনার এপ্লাই করে সেটা স্কিনে সুখাইয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ ৭: টোনার শুখাই গেলে স্কিনে ভালো মানের মস্টুরাইজার দিতে হবে।
শেষ কথা
ঘরোয়া উপাদান দিয়ে সঠিকভাবে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিলে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত।তাই কেমিক্যাল জাতিও পন্য বর্জন করে ঘরোয়া উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নিন। আমার পষ্টটি যদি আপনাদের ভাল লেগে থাকে তবে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url