ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তথ্য জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি কি ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তথ্য খুঁজছেন? তবে এই পোস্টটি পড়ুন এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবেন।
এছাড়াও ড্রাগন গাছে ফুল আসার সময় সহ আরো ড্রাগন গাছ সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারবেন। ড্রাগন গাছ সম্পর্কিত তথ্য জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
ড্রাগন ফল সাধারণত আমেরিকার বিখ্যাত ফল। এই ফলটি ভিনদেশী হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বেও বাংলাদেশের মানুষ ড্রাগন ফলের সাথে এতটা পরিচিত ছিল না। বাংলাদেশের আবহাওয়া ড্রাগন ফলের চাষ উপযোগী হওয়ার ফলে বাংলাদেশের কৃষকেরা ড্রাগন ফল চাষ করছে এবং সফল হচ্ছে।
ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে জানলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে খুব সহজেই ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। ড্রাগন ফল দেখতে আকর্ষণীয় খেতে সুস্বাদু এবং ভিটামিনের ভরপুর। ড্রাগন ফলের ভিতরের অংশ লাল অথবা সাদা রঙে হয়ে থাকে।
তবে ড্রাগন ফল এর উপরের অংশ গোলাপি হলুদ আরো বিভিন্ন রঙের হতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। ড্রাগন ফল গাছ শুধুমাত্র মাটিতেই নয় টবেও চাষ করা সম্ভব।
ড্রাগন ফল গাছে সার প্রয়োগ
ড্রাগন ফল গাছের সাধারণত তিন ধরনের সার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে হাড়ের গুড়া, জৈব সার এবং খৈল পচা পানি। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ড্রাগন ফল গাছ লাগানোর আড়াই থেকে তিন মাস পরে গোবর সার প্রয়োগ করা যায়। গাছের বয়স যখন সাড়ে তিন অথবা চার মাস হয়ে যাবে তখন খৈল ভিজিয়ে রেখে সেই খৈল ভেজার পানির সাথে পরিমাণ মতো পানি বেশি মিশিয়ে তরল করে সেই পানি গাছে দিতে হবে।
বর্ষাকাল শুরুতে এবং শেষে গাছের চারিপাশের মাটির সাথে ভালোমতো গোবর সার মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। যেদিন গাছে খৈল পচা পানি প্রয়োগ করা হবে তার আগের দিন গাছে কোন ধরনের পানি দেওয়া যাবে না। খৈল ভিজিয়ে রাখার তিন চারদিন পরে সেই পানি গাছে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও গাছে হাড়ের গুড়া প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মাটি শুকনো অবস্থায় ঝুরঝুরা করে নিয়ে তার সাথে খোলের গুড়া মিক্স করে খোলের গুড়া প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজন ভেদে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারব প্রয়োগ করা যায়। গোবর সার খৈল পচা পানি এবং হাড়ের গুড়া টবের জন্য আলাদা,মাটির জন্য আলাদা এবং ড্রামের জন্য আলাদা পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
ড্রাগন ফল গাছের রোগ
ড্রাগন ফল গাছের সাধারণত তিন ধরনের রোগ হতে দেখা যায়: মূল পচা, কান্ড পচা ও গোড়া পচা, পোকামাকড়ের আক্রমণ।
- মূল পচা: মূল পচা রোগ সাধারণত যে সকল ফল গাছ টবে অথবা ড্রামে লাগানো হয়েছে সেগুলোতে দেখা যায়। মূল পচা রোগ সাধারণত ড্রাগন ফল গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে পানি জমে থাকার ফলে ধীরে ধীরে মূল পোস্টে শুরু করে এবং গাছ টান দিলে উঠে চলে আসে এটিই হচ্ছে ড্রাগন ফল গাছের মূল পচা রোগ। এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিমাণ অনুযায়ী পানি দিতে হবে এবং পানি যেন ড্রাগন ফল গাছের গোড়ায় না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- কাণ্ড পচা ও গোড়া পচা: ড্রাগন ফল গাছের কাণ্ড পচা ও গোরা পচা রোগ সাধারণত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ড্রাগন ফল গাছ সংক্রামিত হলে কাণ্ড ও গোড়া হলুদ অথবা কালো রঙের হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে পচে যেতে শুরু করে।
- পোকামাকড়ের আক্রমণ: পোকামাকড়ের আক্রমণ শুধু ড্রাগন গাছেই নয় সব গাছেই হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল গাছের সাধারণত পিপড়ার আক্রমণ এবং এক ধরনের বিশেষ ধরনের পোকার আক্রমণ হতে দেখা যায়।
ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা
ড্রাগন ফল গাছ লাগানোর পর তিন মাস পর থেকে সার প্রয়োগ করা শুরু করতে হবে। প্রয়োজনমতো গোবর সার, হাড়ের গুড়া, রাসায়নিক সার এমনকি খৈল পচা পানি পানি দিতে হয়। ড্রাগন গাছ একটু বড় হলে বেড়ার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে খুঁটি দিয়ে রাখতে হয়। যখন প্রচুর শাখা প্রশাখা তৈরি হয় তখন টায়ার দিয়ে দিতে হয়।
গাছের প্রয়োজন মত পানি দিতে হয় অতিরিক্ত পানি প্রয়োগ করা যাবে না এর ফলে গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ মরেও যেতে পারে। সঠিক সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনমতো ডাল ছাটাই করতে হবে। ড্রাগন ফল গাছে কোন প্রকার ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া অথবা পোকামাকড় আক্রমণ করলে সে অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ড্রাগন ফলে নিয়মিত খৈল প্রচার পানি দিতে হবে। গাছের নিয়মিত শাখা প্রশাখা গুলো ছাটাই করে দিতে হবে। গাছ যত ছাটাই করা হবে তত এর বৃদ্ধি ভালো হবে ফুলফলও প্রচুর পরিমাণে ধরবে। গাছের আশেপাশে আগাছা গুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
এছাড়াও ড্রাগন গাছের ফুল আসার সময় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ড্রাগন ফল গাছ যেহেতু ক্যাকটাস বংশীয় গাছ সেহেতু এতে বেশি পানির প্রয়োজন হয় না সেই জন্য সেচ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার প্রয়োজন। ড্রাগন ফল গাছের যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
ড্রাগন গাছে ফুল আসার সময়
ড্রাগন গাছের ফুল আসার সময় সাধারণত স্থানের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। মাটিতে ড্রাগন ফল গাছ রোপন করলে সাধারণত গাছ রোপনের ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ফুল ধরতে শুরু করে। তবে যদি টবে অথবা ড্রামের রোপন করা হয় তবে এক থেকে দেড় বছরের মত সময় লাগতে পারে।
সাধারণত এপ্রিল শেষ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফুল ধরতে দেখা যায়। বর্ষাকালে বেশি ফুল ধরতে দেখা যায়। তবে অক্টোবরের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কোন ফুল থাকে না। পুরনো ডাল অর্থাৎ যে সকল ডালে কোন প্রকার কাটা নেই সে সকল ডালগুলো কেটে ফেলতে হবে তবে ফুল বেশি আসার সম্ভাবনা থাকবে।
ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ
ড্রাগন ফুল ঝরে যাওয়ার কারণ গুলো হচ্ছে: গোড়া পচে যাওয়া, পোকামাকড়ের উপদ্রব,পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার না পাওয়া,ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হওয়া। ড্রাগন গাছে ফুল ঝরে যাওয়ার সমস্যার মধ্যে গোড়া পচে যাওয়ার সমস্যা যা অতিরিক্ত পানি জমে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত টবে অথবা ড্রামে গাছ রোপনের ফলে দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে টবে অথবা ড্রামে কিছু ছিদ্র রাখতে হবে।
গাছে ফুল আসার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার হিসেবে নাইট্রোজেন এবং পটাশ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে এটি গাছের ফুল ঝরে যাওয়ার রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাছের ছত্রাক দ্বারা সংক্রামিত হলে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে। গাছে পিপড়া আক্রমণ করলে টবে চারপাশে ফিনিশ দেওয়া যেতে পারে অথবা পিঁপড়া নাশক স্প্রে করতে হবে।
সাধারণত এই কয়টি কারণে ড্রাগন ফুল ঝরে যায়। ড্রাগন ফুল আসার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন হয়। ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই দামি গাছ ফলন করা সম্ভব।
ড্রাগন গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে মানুষের প্রশ্নের উত্তর
১। ড্রাগন ফলের গাছে কতবার পানি দিতে হয়
সাধারনত ড্রাগন গাছে সপ্তাহে একদিন পানি দিতে হয় তবে টবের মাটি যদি ভেজা থাকে তবে ১৪ দিন পর পানি দিতে হবে অথবা টবের মাটির পানি সুখিয়ে গেলে পানি দিতে হবে।
সাধারনত ড্রাগন গাছে সপ্তাহে একদিন পানি দিতে হয় তবে টবের মাটি যদি ভেজা থাকে তবে ১৪ দিন পর পানি দিতে হবে অথবা টবের মাটির পানি সুখিয়ে গেলে পানি দিতে হবে।
২। ড্রাগন গাছের জন্য কি সার দিতে হয়?
গোবর সার,ভারমি কম্পোষ্ট,জৈব সার।
গোবর সার,ভারমি কম্পোষ্ট,জৈব সার।
৩। ড্রাগন ফল চাষ করতে কতদিন লাগে
সাধারনত ৭-৮ মাস সময় লাগে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ১ বছর বা তার বেশী সময় ও লাগতে পারে।
সাধারনত ৭-৮ মাস সময় লাগে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ১ বছর বা তার বেশী সময় ও লাগতে পারে।
৪। ক্যাকটাস ও ড্রাগন ফল কি এক
ড্রাগন ফল গাছে কাটা থাকাই অনেকে মনে করেন ক্যাকটাস ও ড্রাগন ফল গাছ এক তবে আমটি নয়।ড্রাগন ও ক্যাকটাস গাছ আলাদা তবে তারা সম গোত্রের।
ড্রাগন ফল গাছে কাটা থাকাই অনেকে মনে করেন ক্যাকটাস ও ড্রাগন ফল গাছ এক তবে আমটি নয়।ড্রাগন ও ক্যাকটাস গাছ আলাদা তবে তারা সম গোত্রের।
৫। ড্রাগন ফলের গাছ বাড়ে না কেন
ড্রাগন ফল গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে সার না দিলে অথবা গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে গাছ বারেনা।
ড্রাগন ফল গাছে পর্যাপ্ত পরিমানে সার না দিলে অথবা গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে গাছ বারেনা।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করি ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে আপনার ধারণা পরিস্কার হয়েছে। আমার এই পোষ্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url