মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আপনি কি মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় সম্পর্কে খুঁজছেন? তবে আপনি আমার এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায়,শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়,মোবাইল আসক্তির কুফল এবং মোবাইল আসক্তি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।
ভূমিকা
প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে এই মোবাইল ফোন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মোবাইল ফোন দুনিয়ার সকল কিছুকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
মোবাইল ফোন আমাদের বিভিন্ন কঠিন কাজকে সহজ করে তুলেছে। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ব্যতীত একটি দিন কল্পনা করাও কঠিন হয়ে ওঠে। প্রযুক্তির এই যুগে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। শিক্ষা চিকিৎসা ব্যবসা বাণিজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা মোবাইল ব্যবহার করছি। কিন্তু এই মোবাইলে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা।
এ মোবাইল ব্যবহার করতে করতে আমরা যেন মোবাইলের ওপর আসক্ত হয়ে পড়ছি। ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এই মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
মোবাইল আসক্তির কারণ
মোবাইল মোবাইল আসক্তি দূর করার জন্য মোবাইল আসক্তির উপায় গুলো জানা জরুরি। মোবাইল আসক্তির মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্যবহার করা। আজকাল শিশু-কিশোর সকলের হাতেই স্মার্টফোন লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে তারা এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট, ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন ধরনের ভিডিও মেকিং টুলস ব্যবহার করছে।
এগুলোর বিভিন্ন ভালো দিক রয়েছে কিন্তু তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা এটি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কারণে তাদের তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় এ সকল ফেসবুক,ইন্টারনেটের, বিভিন্ন অনলাইন গেমসের মাধ্যমে ব্যয় করছে। এছাড়াও আজকাল বিভিন্ন ধরনের ভিডিও মেকিং টুলস উঠেছে যেমন: টিক টক। এ সকল ভিডিও মেকিং টুলস এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করছে এবং তা শেয়ার করছে।
ফলে তাদের মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ব্যবহার, অনলাইন গেমস ও সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সময় মোবাইলে ব্যয় করছে যার ফলে তারা মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।
মোবাইল আসক্তির কুফল
মোবাইল আসক্তির কুফল সম্পর্কে জেনে মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।
- অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করার ফলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে মোবাইলের ক্ষতিকর রেডিয়েন্ট এর প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউমার দেখা দিতে পারে এমনকি ব্রেন টিউমারও হতে পারে।
- মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে বেশিরভাগ সময় মোবাইলে ব্যয় করা হয় যার কারণে ঘুমের সমস্যা হয়।এছাড়াও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্যবহারের ফলে ব্রেন ও হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ব্রেনের ওপর চাপ পড়ে যার ফলে স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে পড়াশোনায় মন বসে না।
- মোবাইল আসক্তির ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ফলে একটুতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
- শিশু-কিশোররা তাদের সৃজনশীল শক্তি হারিয়ে ফেলে।
- মোবাইল আসক্তির ফলে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয় যার ফলে শিশুদের যার ফলে মোটা হয়ে যাওয়া,কোমর ব্যথা, মেরুদন্ড ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।
মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায়
মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় হিসেবে আমরা এই সামান্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারি যার ফলে খুব সহজে মোবাইল আসক্তি দূর করতে সক্ষম হব।
সকল প্রকার নোটিফিকেশন বন্ধ রাখাঃমোবাইল আসক্তি দূর করার জন্য এই উপায় অবলম্বন করলে মোবাইল থেকে আসক্তি অনেকটাই কমে আসতে পারে। আমাদের স্মার্ট ফোনের সকল ধরনের অ্যাপস এর নোটিফিকেশন অফ থাকলে মোবাইলের প্রতি মনোযোগ আমাদের অনেকটাই কমে আসবে। মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের নোটিফিকেশন কিছু সময় পর পর আসার ফলে আমাদের মনোযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোবাইলের দিকে চলে যায় যার ফলে আমার নোটিফিকেশন চেক করার জন্য মোবাইল ওপেন করে ফেলি এবং নোটিফিকেশন চেক করার নামে বেশিরভাগ সময়েই মোবাইলে ব্যয় করে ফেলি। তাই নোটিফিকেশন অফ থাকলে মোবাইলের প্রতি মনোযোগ আমাদের অনেকটাই কমে আসবে।
নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার করাঃমোবাইল ব্যবহার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা এবং শুধুমাত্র সেই নির্দিষ্ট সময়েই মোবাইল ব্যবহার করা। এর ফলেও মোবাইল ব্যবহার করা আমাদের অনেকটা কমে আসবে। নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে মোবাইল এর পেছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে না।
মোবাইলের পরিবর্তে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহার করুনঃযে সকল কাজ ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায় সে সকল কাজ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহার করে করা যার ফলে মোবাইল ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহার করে বেশিরভাগ কাজ করার ফলে মোবাইল থেকে অনেকক্ষণ দূরে থাকা সম্ভব হবে যার ফলে মোবাইলে আসক্তি অনেকটাই কমে আসবে।
কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহারঃমোবাইল ফোনের হোম স্ক্রিন অথবা বিভিন্ন অ্যাপস এ যদি কঠিন পাসওয়ার্ড এর ব্যবহার করা হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কঠিন পাসওয়ার্ড দেওয়ার কারণে মোবাইল ব্যবহার করতে অতটা মন চাইবে না। এভাবে মোবাইল থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।
মোবাইল দূরে রাখুনঃআপনি যেখানে কাজ করবেন বা যেখানে বসে আছেন তার থেকে বেশ কিছু দূরে মোবাইলটি রাখুন। মোবাইল দৃষ্টি সীমানার বাইরে থাকলে অথবা আপনার থেকে দূরে থাকলে অলসতার কারনে সেখান থেকে উঠে মোবাইল এনে ব্যবহার করতে মন চাইবে না এভাবে অনেকটাই মোবাইল থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।
মোবাইল স্কিন গ্রেস্কেল করাঃমোবাইল ফোনে স্ক্রিন যতটুকু সম্ভব রে স্কেল করে রাখতে হবে গ্রে স্কেল করে রাখার ফলে মোবাইলে স্কিন সাদা কালো থাকবে যার ফলে মোবাইল ব্যবহার করতে অতটা ইচ্ছা করবে না।
সোশ্যাল অ্যাপস লুকিয়ে রাখাঃসোশ্যাল যতগুলো অ্যাপস রয়েছে facebook, twitter messenger, whatsapp ,youtube সকল অ্যাপস গুলো অ্যাপসগুলোকে অ্যাপস লোক এ রাখতে হবে অথবা হোম স্ক্রিন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। সোশ্যাল অ্যাপস গুলো লুকিয়ে রাখার ফলে মোবাইল ব্যবহার অনেকটাই কমে যাবে।
অবসর সময়ে মোবাইল ব্যবহার না করাঃঅবসর সময় গুলো বই পড়ে,বন্ধুদের সাথে গল্প করে অথবা পরিবারের সাথে গল্প করে সময় কাটানো।এতে করে মোবাইলের প্রতি আসক্তি অনেকটাই কমে আসবে।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায়
বর্তমানে শুধু কিশোরদের মধ্যেই নয় শিশুদের মধ্যে মোবাইল আসক্তির সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিশুরা তাদের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইলকে বেছে নিয়েছে। শিশুদের মধ্যেই মোবাইল আসক্তি কমানো খুবই প্রয়োজন নয় তো তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে। শিশুদের মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় হিসেবে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে
- শিশুদেরকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা।তাদেরকে বেশি বেশি গল্পের বই এবং বিভিন্ন ধরনের সাইন্স ফিকশন জাতীয় বই কিনে দিতে পারেন।
- অনেক বাবা মা আছেন যারা দুজনেই চাকরি করেন যার ফলে তাদের বাচ্চাদেরকে সময় দিতে পারে না ফলে তারা বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন কিন্তু তা না করে তাদেরকে সময় দিন যার ফলে তারা মোবাইল থেকে দূরে থাকবে।
- বাচ্চাদের সামনে মোবাইল ফোন যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন। বাচ্চারা সাধারনত মা বাবাকে অনুকরণ করে। তাই শিশুদের সামনে যতটা সম্ভব মোবাইল ফোনের ব্যবহার কম করুন।
- শিশুদের বাহিরে খেলার অভ্যাস করুন তাদের সমবয়সী যারা আছে তাদের সাথে মিশার সুযোগ করে দিন।
- শিশুদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করুন।
- অবসর সময় শিশুদেরকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে নিয়ে যান।
- শিশুকে একটি নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার করতে দিন এর বেশি নয়।
- শিশুদেরকে নিজের কাজ নিজে করতে শিখান এতে সে নিজে নিজের কাজ করতে শিখবে এবং যতটুকু সম্ভব মোবাইল বা বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকবে।
- অনেক অভিভাবক আছে বাচ্চারা খেতে না চাইলে বা ঘুমাতে না চাইলে তাদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেন কিন্তু তা না করে তাদেরকে গল্প শোনান এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা শিখবে এবং এ সকল ডিভাইস থেকে দূরে থাকবে।
শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি
মোবাইল আসক্তির ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের পড়াশোনাও বর্তমানে অনলাইনে হয়ে যাওয়ার ফলে ক্লাসের ফাঁকে তারা বিভিন্ন ধরনের সোসিয়াল অ্যাপস ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছে। মোবাইল আসক্তির কুফল বর্ণনা করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা সম্ভব।
মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইলের সময় দেওয়ার ফলে তারা পড়াশোনার সময়টা মোবাইলে ব্যয় করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।
ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি দূর করার জন্য তারা পড়াশোনার সময় মোবাইল অফ রাখতে পারে। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ না করে সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে। শিক্ষার্থীদেরকে স্মার্টফোন ব্যবহার না করে বাটন ফোন ব্যবহার করতে পারে।
প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। মোবাইল ফোন যেহেতু পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি করছে তাই যতটা সম্ভব মোবাইল থেকে দূরে থাকতে হবে। পড়ার সময় মোবাইল বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় জেনে সে সম্পর্কে সচেতন হয় তবে তারা খুব সহজেই তাদের মোবাইল আসক্তি দূর করতে পারবে।
শেষ কথা
মোবাইল আসক্তির কারণ জেনে মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় প্রয়গ করতে হবে তবেই মোবাইল আসক্তি দূর করা সম্ভব।প্রিয় পাঠক আমার এই আর্টিকেলটা সম্পূর্ণ পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা এ আর্টিকেলটি যদি আপনার কোন প্রকার কোন উপকারে আসে তবে অবশ্যই আপনি আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url