বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক আপনি কি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তবে আমার এই আর্টিকেলটি পড়ুন 
বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা-বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
এই আর্টিকেলে আমি বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা, বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম সহ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি।এই পোস্টটি পড়লে আপনি বিটরুট এর জন্য বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন।

ভূমিকা

বিটরুট তেমন পরিচিত সবজি না হওয়াই এটি সম্পর্কে আমরা তেমন আগ্রহ প্রকাশ করিনা কিন্তু জনেন কি এই সবজিটির অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।পুষ্টিগুণে সেরা বিটরুট।এই বিটরুট সাধারণত শীত কালীন সবজি। শীতকালে এই সবজির দেখা মিলে।অবাক করে দেয়ার মত পুষ্টিগুণ রয়েছে এই সবজিতে।

বিটরুট এর দাম কত

বিটরুটের দাম স্থান ও মৌসুম ভেদে ভিন্ন হতে দেখা যায়। প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায় এর দাম সাধারণত ১৪০০ টাকা কেজি হয়।তবে শীতের মৌসুম ছাড়া অন্য মৌসুমে এর দাম আরো বেশি হতে দেখা যায়।


বর্তমানে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ সহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে বিট বিক্রয় করতে দেখা যায়। তারা সাধারনত বিটের গুড়া বিক্রয় করে থাকে। অনলাইনে বিভিন্ন পেজে বিভিন্ন ধরনের দাম হতে দেখা যায়। বিটের মান ও গুণের উপর ভিত্তি করে এর দামে তারতম্য হতে দেখা যায়।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি যেভাবে বিটরুট খান না কেনো উপকার পাবেন। আপনাদের সুবিধার্থে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম বর্ণনা করছি আশাকরি উপকারে আসবে।
  • বিটরুট কাচা খোসা ছড়িয়ে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে পারেন।
  • বিটরুট সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়।
  • বিটরুট এর জুস বানিয়ে খেতে পারেন। এখন বাজারে বা অনলাইনে বিটরুট গুড়া কিনতে পাওয়া যায় সেই গুড়া হালকা গরম পানি বা নরমাল পানির সাথে মিক্স করে খেতে পারেন।আবার বিটরুট কিনে এনে খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে ব্লান্ডার এ চিনি বা লবণ আপনি যে স্বাদ পছন্দ করেন তা দিয়ে তার সাথে দিয়ে জুস বানিয় খেতে পারেন।
  • একই সবজি খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছেন? সবজিতে নতুনত্ব আনতে বিটরুট দিয়ে সবজি বানিয়ে খেতে পারেন যেমন সুস্বাদু তেমন উপকারী।আবার যে কোনো সবজির সাথে বিট রুট গ্রেট করে দিতে পারেন।
  • আমরা খাবার পাতে সালাদ অনেকেই পছন্দ করি সেই সালাদ তৈরিতে বিটরুট ব্যবহার করা যেতে পারে।ফ্রুট সালাদ হোক বা অন্য যে কোনো সালাদ তার সাথে বিটরুট সলাদের স্বাদ বাড়িয়ে দিবে।
  • বিভিন্ন ফলের সাথে বিট মিক্স করে জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। বিট এর সাথে ডালিম, আপেল, টমেটো অথবা গাজর এর যেকোনো একটির সাথে মিক্স করে লবণ দিয়ে জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • চালের রুটি, গমে রুটি, আলুর পরোটা তো অনেক খেয়েছেন কিন্তু বিটের রুটি কখনো খেয়ে দেখেছেন কি? কি ভাবছেন বিট দিয়ে আবার রুটি বানানো যায়। হ্যাঁ বিট দিয়েও রুটি বানানো যায়। সেজন্য আটা অথবা ময়দার সাথে বিট পেস্ট নিয়ে সুন্দর করে ময়ান করে রুটি অথবা পরোটা বানিয়ে নিতে পারেন। এটি খেতেও দারুন সুস্বাদু।
  • নুডুলস বা পাস্তা তৈরিতে আমরা বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যবহার করে থাকি সেই সবজির পরিবর্তে আমরা বিটরুট দিয়ে বানাতে পারি অথবা সবজিগুলোর সাথে বিটরুট মিক্স করে ও বানাতে পারি।
  • বিটরুট দিয়ে স্মুদি বা শেক বানিয়ে খেতে পারেন। এর জন্য বিট রুট কিনে এনে সুন্দর মতো ধুয়ে কেটে ব্লেন্ডারে দিয়ে তার সাথে দুধ, চিনি অথবা কনডেন্স মিল্ক পরিমাণ মত,কলা মিশিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলুন তৈরি হয়ে যাবে কালারফুল স্মুদি।
  • বিভিন্ন ফাস্টফুড খাবারেও বিটরুট ব্যবহার করা হয়।
  • বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে বিটরুট ব্যবহার করা হয়।

বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা

রূপচর্চা করতে আমরা সকলেই ভালোবাসি। ত্বকের যত্নে আমরা কম বেশি সকলেই সচেতন।আপনি কি জানেন এই মৌসুমী সবজি বিটরুট দিয়ে খুব সহজেই আপনার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। চলুন দেখে নেই ত্বকের যত্নে কার্যকরী কিছু ফেসপ্যাক
  • এক চামুচ মধুর সঙ্গে দুই চা চামুচ বিটরুটের রস মিক্স করে ত্বকে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বক কোমল করতে কাঁচা দুধের সাথে পরিমাণ মত বিট রুটের রস এবং আলমন্ড অয়েল মিক্স করে লাগান ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ত্বক কোমল হবে।
  • ত্বকের ph ব্যালান্স করতে টোনার ব্যবহার করা উচিত।আর আপনি শীতের এই মৌসুমী ফল বিটরুট দিয়েই সুন্দর টোনার তৈরি করে নিতে পারেন।এই টোনার তৈরিতে দুই চামুচ চাল সারা রাত এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে সকালে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে সে পানির সাথে এক চিমটি বিটরুট পাউডার মিক্স করে বানিয়ে ফেলুন টোনার।
  • ঠোঁটের কালো ভাব দূর করতে লেবুর রস আর বিটরুট গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে নিয়মিত ঠোঁটে লাগান।
  • ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে টমেটোর পালপের সাথে সামান্য বিটরুট গুঁড়ো মিক্স করে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন লাগান।
  • ত্বকের ম্যাসেজ ক্রিম তৈরিতে বিটরুট ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের বলি রেখা দুর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।ম্যাসেজ ক্রিম বানাতে বিটরুট থেকে রস বের করে বা বিটরুট গুরোর সাথে পরিমাণ মত বেসন আর চালের আটা মিক্স করে তাতে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন। বিভিন্ন পার্লারে ম্যাসেজ ক্রিম হিসেবে বিটরুটের ম্যাসেজ ক্রিম ব্যবহার করা হয়।
  • ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে ত্বকের পোর থেকে ময়লা দূর করতে মুলতানি মাটির সাথে বিটের রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • ত্বকের কালো দাগ দূর করতে টক দইয়ের সাথে বেসন এবং বিট রস মিশিয়ে লাগান।

বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা

বিটরুট এমন একটি সবজি যাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। বিটরুট খুব একটা পরিচিত সবজি না হাওয়াই বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নাই। তো চলুন জেনে নিই বিটের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে
  • বিটরুটে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি-১২ রয়েছে যা রক্তশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বিটরুট ঔষদের মত কাজ করবে।
  • বিট রুট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগেন তারা চাইলেই নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
  • পাকস্থলীর এসিডের সমস্যা দূর করতে বিটরুট বেশ কার্যকর। পাকস্থলী এসিডের সমস্যা দূর করতে বিটরুটের জুস খেয়ে দেখতে পারেন সমাধান মিলবে।
  • পিত্তথলি ও কিডনির পাথর হতে বাধা দান করে এই বিটরুট।
  • বিটরুট চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে তাই চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত বিটরুট খান।
  • শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে বিটরুট বেশ কার্যকর ডেটক্স ড্রিংক হিসেবে বিটরুটের জুস খেতে পারেন। এতে থাকা ফাইবার শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে লিভার কে সুস্থ রাখে।
  • গর্ভবতী মায়ের জন্য বিটরুট বেশ উপকারী। গর্ভাবস্থায় বিটরুট গ্রহণের ফলে মা ও শিশুর আয়রনের অভাব পূরণ করে শিশুর স্বাভাবিক গঠনে সহায়তা করে।
  • কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে চুলে কালারের জন্য বিটরুট বেশ কার্যকর।
  • বিটরুট হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • বিটরুটে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
  • বিটরুটে আয়োডিন থাকায় একটি গলগন্ড রোগের প্রতিরোধক।
  • বিট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে।
  • যাদের মাসিকের সমস্যা আছে তারা বিটরুট খেতে পারেন। অনেকটাই আরাম পাবেন।
  • যাদের শরীরে মেদ চর্বি জমে গেছে ডায়েট করতে চাইছেন তারা তাদের ডায়েটে বিতৃত রাখতে পারেন।এটি চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
  • শরীরের শক্তি বাড়াতে বিটরুট ভূমিকা রাখে।যারা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সাথে যুক্ত তাদের ডায়েট চার্টে বিটরুট লক্ষ করা যায়।
  • বিটে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে। তাই হাড়ের যত্নে বেশ উপকারী এই সবজি।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিট বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে বিটরুট সহায়তা করে।
অনেক তো জানলাম উপকারিতা এবার চলুন অপকারিতা গুলো ও জেনে নেয়া যাক
  • ডায়াবেটিকস রোগীদের বিটরুট না খাওয়াই উত্তম। বিট রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় যা ডায়াবেটিকস রুগীদের জন্য ক্ষতিকর।
  • যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে তাদের জন্য বিটরুট খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
  • প্রয়োজনের অতি মাত্রায় বিট খেলে বদ হজম হতে পারে।
  • যাদের বিটরুটে অ্যালার্জি তারা এটি এড়িয়ে চলবেন।
  • বিট অতিরিক্ত খাবার ফলে লাল প্রসাব হতে পারে।

FAQ

বিট খাওয়ার কতদিন পর প্রসাব লাল হয়?

সাধারণত বিট খাবার ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর প্রসাব লাল হয়।তবে তার কম সময়ে ও হতে পারে।

বিট কি কাজে লাগে?

বিট বিভিন্ন রোগের ঘরোয়া ওষুধ। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে বেশ উপকারী।

বিটের রস কখন খাওয়া উচিত?

সকালে খাবার খাবার পর বিটরুটের রস খাওয়া যেতে পারে।আবার দুপুরে খাবার খাওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পর খেতে পারেন।

প্রতিদিন কতটুকু বিটরুটের জুস খাওয়া যায়?

প্রতিদিন এক গ্লাস অথবা দুই কাপ পরিমাণ বিটরুটের রস খাওয়াই যথেষ্ট।

বিটরুটের প্যাক কি মুখের জন্য ভালো?

বিটরুট যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান তায় এটি ত্বকের জন্য ভালো তবে যদি আপনার বিটরুটে অ্যালার্জি থাকে তবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

মন্তব্য

প্রিয় পাঠক বিটরুট একটি ঔষধি সবজি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম। তবে বুঝে শুনে পরিমাণ মত খেতে হবে। আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে যদি আপনি সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন।ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url